ধূমকেতু
ফেলে আসা পথ ধরে, বহুদিন পর...

শহরটার মানচিত্র ছবির মত হৃদয়ে গাঁথা হয়ে গেছে ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হয় সে ছবির কোন কোন কোণা যেন ধূসর হয়ে গেছে। ১০ বছরের বেশি পার হয়ে গেছে। খুব কম সময় তো নয়!
মুন্সীগঞ্জ থেকে রাজশাহীর যাত্রাটা ছিলো ভেঙে ভেঙে। প্রথমে লঞ্চপথে ধলেশ্বরী পাড়ি দিয়ে নারায়নগঞ্জ। ওখান থেকে এক লোকাল ট্রেনে ঢাকা। তারপর শাটল ট্রেন। তারপর সিল্কসিটি ধরে রেশম নগরীর পথে।
সিল্কসিটি তখন কমলাপুর পর্যন্ত আসতো না। মাঝখানে একটা শাটল ট্রেন ধরতে হত। পরে লাইনের কাজ হয় বোধহয়। সিল্কসিটি কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত হয়। মুক্তারপুর সেতু হওয়ার পর ঢাকা অব্দি বাসেই যাওয়া হত আবার। বাসের অনেকরকম নাম। DTL, নয়ন, কুসুমপুর, দিঘীরপাড়- নতুন কোন বাস আসতো, পুরনোগুলো হারিয়ে যেতো। বাস যাত্রা অবশ্য তখন আতঙ্কের নাম ছিলো। ট্রেন ছিলো আনন্দের।
নতুন কিছু- আমার কাছে সবসময়ই ছিলো এক্সাইটিং একটা ব্যাপার। তবে নীল রংয়ের কোচগুলোর বদলে নতুন সাদা কোচে প্রথম চড়াটা ছিলো অদ্ভুত। ট্রেনের মধ্যে বাসের মত সিট- কেমন যেন একটা ব্যাপার। তবে তার চেয়ে বেশি- জানালা। জানালার নিচের অর্ধেকটা কাচ দেয়া। উপরের অর্ধেকটুকু শুধু খোলা যায়।
আরেকটা নতুন কিছুর দেখা হয়েছিলো যখন পদ্মা এক্সপ্রেস আসে। একেবারে নতুন ট্রেন। কঠিন ব্যাপার। তারপর আরেক নতুন ট্রেন এলো- ধূমকেতু। তারপর দেখি ওমা, একই ট্রেন এক নামে এসে আরেক নামে যায়। তারপর তো নামফলকই হয়ে গেলো সিল্কসিটি/পদ্মা/ধূমকেতু। সকালে এক নাম, দুপুরে এক নাম, রাতে আরেক নাম।
বছরে দু’বার কমবেশি এই পথ পাড়ি দেয়া হত তখন। তারপর একবার অন্য একটা ট্রেন ধরা হয়।
মুন্সীগঞ্জ ছেড়ে আসার দিনটা ছিলো ডিসেম্বর মাসের শেষের এক শীতের সকাল। সাল ২০১৪। রংপুর এক্সপ্রেসে করে বগুড়াতে আসা। তারপর অনেক বছর আর ট্রেনে চড়া হয়নি।
কোন সময়ে যেন বাসের সাথে একটা সখ্যতা হয়ে যায়। আগের মত আর আতঙ্ক মনে হয় না। গাজীপুর থেকে বগুড়ার রাস্তা অবশ্য ভালো। দীর্ঘ রাস্তা ‘একতা’-র Hino 1J কোচের বাসগুলো ভালোই আসে। দমবন্ধ মনে হয় না আগের মত। এমনকি গাজীপুর থেকে ঢাকার পথের লোকাল বাসগুলোর সাথেও কীভাবে যেন মানিয়ে নিয়েছি।
পাবনাতে সেবার যখন গেছিলাম, স্টেশনের কাজ চলছিলো। পরেরবার রাজশাহী থেকে পাবনাতে যাওয়া হয় ট্রেন ধরে। গত ১০ বছরে ট্রেনে ওঠা সেবারই। অবশ্য মেট্রোরেলে ওঠা হয়েছে, অনেকবারই। তবে ট্রেনের তুমুল ঝাঁকুনি কিংবা ঝম ঝম শব্দের ছন্দ তো তাতে নেই!
যখন লেখা তখন আমি ঢাকা বিমান বন্দর স্টেশন থেকে ভোর ৬:২৮ মিনিটে ছেড়ে আসা ধূমকেতু এক্সপ্রেসে। ট্রেনের নেমপ্লেইটে এতদিনে বনলতা নামটাও যোগ হয়েছে এখন- পদ্মা/সিল্কসিটি/ধূমকেতু/বনলতা। চেনা পথে, বহুদিন পর…